আঘাত ছাড়াও হঠাৎ করে আমাদের শরীরের কোন অংশ ফুলে
উঠে বিশেষ করে হাত, পা, গোড়ালি, পায়ের পাতা আবার কোন সময় চোখ, গাল, পেট ইত্যাদি
জায়গায়। বয়স্ক কালে এই সব একটু বেশি হয়। বিজ্ঞানের ভাষায় একে এডিমা বলে। কেন হয়
এডিমা ? আমরা জানি আমাদের শরীরে ৭০% হল জল। কিন্তু এই ৭০% জল থাকে কোথাই ? সেটা
জমে থাকে ঠিক প্রতিটি কোষের বাইরে যে ফাঁকা জায়গা থাকে তার মধ্যে ও রক্ত নালীর
প্রাচীরে। আমাদের শরীরে অনবরত জলের প্রয়োজন পরে, তখন সে এখান থেকেই জল সংগ্রহ করতে
থাকে। তবে শরীরে যাতে অতিরিক্ত জল না জমে যায় সে বিষয়ে আমাদের হার্ট, লিভার এবং
কিডনি খেয়াল রাখে। এখন কোন কারণে যদি হার্ট, লিভার বা কিডনিতে ইনফেকশন হয় অথবা
ব্রেনে টিউমার হয় তাহলে শরীরে অতিরিক্ত জল নিয়ন্ত্রণ প্রণালীতে বিঘ্ন ঘটে, ফলে
শরীরে জল জমতে শুরু করে ও এডিমা দেখা দেয়। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে বা দাঁড়িয়ে থাকলে
রক্ত সংবহন কমে যায়, যার ফলেও শরীরে জল জমতে পারে। লবণ বা সোডিয়াম শরীরে অতিরিক্ত
জল নিয়ন্ত্রণের কাজে একটি বিশেষ ভুমিকা পালন করে।
এটি জলকে আবদ্ধ করে ফেলে এবং শরীরের কোষের ভিতরে ও বাইরের তরলের ভারসাম্য
রক্ষা করতে সাহায্য করে। তাই জল কম পাণ করলে, উচ্চ সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেলে বা
অতিরিক্ত লবণ খেলে শরীরে লবন বা সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে ইলেক্ট্রলাইটের
লেভেল বৃদ্ধি পায় ও এডিমা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে শুরু করে। এছাড়াও কিছু ওষুধের
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াতেও শরীরে জল জমতে পারে। যেমন – হাই ব্লাড প্রেশারের ওষুধ,
হরমন জাতিয় ওষুধ, জন্ম নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ ইত্যাদি এডিমা সৃষ্টিতে অবদান রাখে।
এই
রোগ প্রতিরোধ জন্য সব সময় ওষুধের প্রয়োজন হয় না। বরং শরীরের জল কমানোর জন্য যেসব
ওষুধ খাওয়া হয়, সেগুল উলটে জল জমার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। সব চেয়ে ভালো উপায় হল জীবন
যাপনের পরিবর্তন করা, শারীরিক সক্রিয়তা বাড়ানো। একভাবে অনেকক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে না
থেকে হাটাহাটি করুন। উচ্চ মাত্রার লবণ যুক্ত খাওয়ার থেকে বিরত থাকুন। খাওয়ারের
সাথে বাড়তি লবণ গ্রহনের অভ্যাস বদলে ফেলুন। আমাদের শরীরের একটি অন্যতম গুরুত্ব
পূর্ণ খনিজ উপাদান হল ম্যাগনেশিয়াম। শরীরে ম্যাগনেশিয়াম গ্রহণের মাত্রা বাড়িয়ে
দেহের অতিরিক্ত জল জমার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে
দৈনিক ২০০ মি.গ্রা ম্যাগনেশিয়াম গ্রহণ করলে মেয়েদের শরীরে জল আসার সমস্যা কমে যায়।
সবুজ সাক সব্জি, কলা, বাদাম, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে
ম্যাগনেশিয়াম থাকে। আমাদের শরীরের প্রতিদিন গড়ে ০.৬ গ্রাম ম্যাগনেশিয়ামের প্রয়োজন।
এর সাথে প্রতিদিন পরিমাণ মত জল পাণ করতে হবে। দিনে ৩ থেকে ৪ লিটার জল পাণ করাই
যথেষ্ট। মাত্রাতিরিক্ত জল পাণ করবেন না। এতে উলটে প্রতিক্রিয়া হতে পারে।