রোগ নির্ণয় করা
বা
Diagnose
যে কোন চিকিৎসা শুরু করার পূর্বে রুগীর সঠিক সমস্যা বা রোগ নির্ণয় করা
চিকিৎসকের প্রথম কর্তব্য। আবার সঠিক রোগ নির্ণয় করা তখনি সম্ভব যখন মূল কারণটি
খুঁজে বার করা যায়। তাই শারীরিক পরীক্ষা ছাড়াও, রোগ নির্ণয়ের পূর্বে ডাক্তারদের
মূত্র পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা, এক্সরে, কারডিওগ্রাম, সোনোগ্রাফি, ব্রাইন স্কেনিং
ইত্যাদি রিপোর্টের দরকার হয়। আধুনিক বিজ্ঞানের আশীর্বাদে বহু জটিল রোগের কারণ
নির্ণয় করা এখন অনেক সহজ ও নির্ভুল হয়েছে। কিন্তু এই গুলি খুব দীর্ঘ ও খরচ সাপেক্ষ
প্রক্রিয়া। আনেক সময় তা রুগীর সাধ্যের বাইরে হয় বা চিকিৎসালয়ের অভাবে সঠিক রোগ
নির্ণয় করা সম্ভবপর হয়ে উঠে না।
আশ্চর্যের ব্যাপার হল
প্রকৃতি আমাদের শরীরের মধ্যে যেমন ডাক্তার - ঔষধ দিয়েছেন তেমনি শরীরে যে রোগ হচ্ছে
বা হয়েছে তার লক্ষণ আগে থেকেই প্রকাশ করার
ব্যবস্থা করেছেন। শরীরকে নিয়ে দীর্ঘ গবেষণার পরে এই সমস্ত লক্ষণগুলিকে আমরা কিছুটা জানতে
পেরেছি। অবাক হতে হয়, এই লক্ষণগুলি আধুনিক ডাইয়াগোনাসটিক রিপোর্টগুলি থেকেও অনেক
বেশি সঠিক ও বিশ্বস্ত। প্রকৃতি বিনামূল্যে আমাদের রোগ নির্ণয় করার জন্য শরীরের
মধ্যে ডাইয়াগোনাসটিক সেন্টার তৈরি করে রেখেছেন। আমাদের শুধু জানতে হবে কি ভাবে সেই
টেস্ট রিপোর্টগুলি পেতে হয়। নিম্নে এই সমস্ত লক্ষণগুলি আলোচনা করা হল। এই গুলি
ভালো করে অধ্যয়ন করা ও সর্বদা সচেতন থাকা আমাদের প্রথম কর্তব্য। দ্বিতীয় কর্তব্য
হল একবার রোগ নির্ণয় করা হয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করা।
১. গায়ের তাপ – একজন সুস্থ ব্যক্তির
স্বাভাবিক তাপ হল ৯৮.৪ ডিগ্রী । ৯৯ থেকে ১০১ ডিগ্রী হলে সামান্য জ্বর। ১০১ থেকে
১০৩ ডিগ্রী বেশ জ্বর। ১০৩ থেকে ১০৫ ডিগ্রী ভীষণ জ্বর। ১০৫ থেকে ১০৭ ডিগ্রী
সাংঘাতিক জ্বর। ১০৭ থেকে ১১০ ডিগ্রী অবশম্ভাবী মৃত্যু। থার্মোমিটার বা তাপমান
যন্ত্র দিয়ে দেহের তাপ নির্ণয় করা হয়। সাধারণতঃ বগলের নিচে থার্মোমিটার লাগাতেই
আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু জিহ্বার নিচের জ্বরই নিখুঁত। কারো জ্বর ১০০ ডিগ্রী বললে সেটা
জিহ্বার নিচের জ্বর ( ওড়াল টেম্পেরেচার ) বলেই ধরতে হবে। অনেক সময় পায়ুতেও জ্বর দেখা
হয় এবং এটা খুব নিখুঁত। যেমন, এক ধরনের ম্যালেরিয়ায় গায়ে জ্বর থাকে না অথচ পায়ুতে
তখন প্রচণ্ড উত্তাপ। মুখের জ্বর বগলের জ্বর থেকে ১ ডিগ্রী বেশি আবার পায়ুর জ্বর
থেকে ১ ডিগ্রী কম।
২. জিহ্বা - রোগ নির্ণয় করার একটি প্রধান সহায় হলো জিভ।
সুস্থ শরীরে জিহ্বা বা জিভ থাকে বেশ পরিষ্কার ও নরম। কিন্তু শরীরে কোন উপসর্গ বা গোলমাল
হলে তার লক্ষণ জিহ্বায় ফুটে উঠে। এর লক্ষণগুলি হল -
. শুকনো জিহ্বা – প্রচণ্ড জ্বর ও বিকারের
সময় এবং স্নায়বিক রোগে জিভ শুকনো (coated) থাকে।
. প্রলেপাবৃত জিহ্বা - কোষ্ঠবদ্ধতা এবং
পাকস্থলী রোগে জিহ্বা প্রলেপাবৃত বা Layer Covered থাকে।
. লেপাবৃত জিহ্বা - টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড,
পায়খনা পরিষ্কার না হওয়া প্রভৃতি রোগে ভুগলে জিহ্বা লেপাবৃত বা Coated Covered
থাকে।
. লাল জিহ্বা – আদি টাইফয়েড রোগে জিহ্বার
একটি নিজেস্ব চেহেরা হয়। তা সামনে ছালে ঢাকা থাকে, কিন্তু তার ধার বা কিনারা লাল
থাকে। তাকে বলে Typhoid
Tongue বা Angry
Looking Tongue । পাকস্থলীতে ফোড়াসহ জ্বর (Septic
Fever) হলে জিহ্বা লাল হয়। যদি পাকস্থলী জনিত কারণে প্রবল জ্বর
হয় এবং জিহ্বা লাল দেখায় তবে বুঝতে হবে মৃত্যু আসন্ন।
. হলুদ প্রলেপ - জিহ্বা যদি হলুদ
প্রলেপ পড়ে তা হলে বুঝতে হবে যকৃতের রোগ হয়েছে। পিত্তের দোষ থাকলে জিহ্বা হলদে হয়।
. নীলাভ জিহ্বা - রক্ত চলাচলের ব্যাঘাত ঘটলে
জিহ্বা হয় নীলাভ।
. সাদা জিহ্বা - পরিপাকে গোলাযোগে বা পেটের
রোগ হলে জিহ্বায় সাদা আস্তরণ পড়ে।
. কালো জিহ্বা - শরীরে বড় কোন বিকার বা
ভয়ঙ্কর কোন হলে কালো।
. দাগাকৃতি জিহ্বা – বদ হজম বা জিহ্বায় ঘা
হলে জিহ্বায় ফাটা ফাটা দাগ হয়।
নাড়ী – মানুষের দুই হাতের নাড়ী স্পর্শ করে
শারীরিক অবস্থার একটি পুরনাঙ্গা ধারনা পাওয়া যায়। পুরুষের ডানহাত এবং মহিলাদের
বামহাতের নাড়ী স্পর্শ করে রোগ নির্ণয় করা হয়। একটি সুস্থ দেহের নাড়ীর গতি হবে
স্বাভাবিক, মৃদু এবং সম্ভাব্য বিশিষ্ট। জন্মকাল থেকে ১ বছর পর্যন্ত নাড়ীর স্পন্দন
প্রতি মিনিটে ১২০ – ১৪০ বার, ২ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত ৯০-১০৫ বার, ৬ থেকে ১৫ পর্যন্ত
৮০-৯০ বার, ১৬ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত ৭০-৭৫ বার, বৃদ্ধ বয়সে ৫০-৬৫ বার।