এনাটমি ( Anatomy)
শরীর বিদ্যা নিঃসন্দেহে একটি জটিল বিষয় । কিন্তু তা সত্বেও এই সম্পর্কে যদি সঠিক জ্ঞান না থাকে তাহলে চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যায়ন করেও কোন লাভ পাওয়া যাবেনা । ঠিক যেমন কোন জাইগা সম্পর্কে জানতে হলে তার ভৌগলিক পরিবেশ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন । মানব শরীরের ভৌগলিক পরিবেশ কোষ, কলা, রস, রক্ত তৎসহ বিভিন্ন যন্ত্রের ক্রিয়া এবং শক্তি ইত্যাদি দিয়ে তৈরি । এদের সঠিক স্থান কাজ সম্বন্ধে পরিচয় হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
মানব দেহের পরিচয় জানতে হলে দেহের কাঠামো, দেহের বিভিন্ন যন্ত্র বা অংশ
কথায় কি ভাবে আছে, তাদের নাম আকৃতি-প্রকৃতি, অবস্থান এবং অন্যান্য যন্ত্রের সঙ্গে
সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় জানতে হবে। জানতে হবে মানব দেহের শক্তির উৎস।
মানব দেহকে একটি
প্রতিমার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। প্রতিমা যেমন তার কাঠামোর ওপর সংগঠিত তেমনি
মানব দেহও একটি কাঠামো বা কঙ্কালের ওপর সংগঠিত। প্রতিমার কাঠামো যেমন কাঠ, খড়, দড়ি
প্রভৃতি দিয়ে তৈরি হয় তেমনি মানুষের কঙ্কাল অস্থি, উপাস্থি, বন্ধনি প্রভৃতি দিয়ে
তৈরি। প্রতিমাকে যেমন মাটি, রঙ, বার্নিশ দিয়ে সুন্দর করে তোলা হয় তেমনি মানবদেহকেও
কঙ্কালের ওপর রক্ত, মাংস, মেদ, চর্ম ইত্যাদি নানা উপাদান দিয়ে সুন্দর করে গড়ে তোলা
হয়। মানব কঙ্কাল অস্থি উপাস্থি দ্বারা গঠিত বলেই মানব দেহ এত দৃঢ় বা শক্ত হয় । আবার
মাংসপেশী এবং বন্ধনী দিয়ে অস্থি ও অস্থিসন্ধিগুলো বাধা থাকার জন্য একে অন্যের সাথে
সহজে ঘসে যায় না। এই মাংসপেশী এবং বন্ধনীর সাহায্যেই মানুষ এবং তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো প্রয়োজন মত উঠা বসা ও
নড়া চড়া করতে পারে। মানব কঙ্কালের উপর মাংসপেশী, বন্ধনী , রক্তরস, চর্বি, , চর্ম, বিভিন্ন
জটিল যন্ত্রাদি প্রভৃতি নানা প্রকার উপাদানের সহযোগে একটি পূর্ণাংগ মানব দেহ গঠিত হয়। আবার মানব
দেহের এই সমস্থ উপাদানগুলি বিভিন্ন চিত্র বিচিত্র কোষ বা সেল দ্বারা তৈরি। এই কোষগুলিকে
জীবকোষ বা লিভিং সেল বলা হয়। ঠিক যেমন ছোট ছোট ইট দিয়ে একটি বিরাট বাড়ি তৈরি করা
হয়।
জীব
কোষ বা Living cell – মাবন দেহ বিভিন্ন ধরনের কোষ দিয়ে তৈরি। এরা হল জীব দেহের
গঠনমূলক ও ক্রিয়ামূলক একক। এদের জীবিত বলা হয় কারণ প্রতিটি কোষের মধ্যেই প্রাণ থাকে।
প্রতিটি কোষের মধ্যেই দিনরাত বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ক্রিয়া প্রক্রিয়া বা বিপাকিয়
ক্রিয়া ঘটে চলেছে। আর তার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান যথা- খাদ্য বা পুষ্টি, জল,
অক্সিজেন রক্তের মাধ্যমে কোষে এসে হাজির হয়। এই সমস্ত উপাদেনগুলি কোষের মধ্যে
পরিবর্তিত হয়ে ও শোষিত হয়ে জীবিত কোষের উপাদানে পরিণত হয়। মানুষের মধ্যে যে সমস্ত
ক্রিয়াকলাপ বা ধর্ম দেখা যায় তা সবই এই কোষ গুলোর মধ্যে দেখা যায়। একজন পূর্ণ
বয়স্ক লোকের দেহে ( ৭০-৮০ কেজি ওজনবিশিষ্ট ) কোষের সংখ্যা আনুমানিক ৬ লক্ষ কোটি
থেকে ১০ লক্ষ কোটি। প্রতিটি কোষের দুটি প্রধান অংশ থাকে। (এক) প্লাজমা পর্দা বা
কোষ পর্দা আর (দুই) প্রোটোপ্লাজম।
১. কোষ পর্দা – এটি একরকম সজীব আবরণী। এটি ভেদ্য
এবং ত্রিস্তরীয়। কোষ পর্দা লিপিড এবং প্রোটিন দিয়ে গঠিত। কোষের প্রোটোপ্লাজমকে বা
কোষের সজীব অংশকে রক্ষা করা, কোষান্তর ব্যাপন, অভিস্রবণ এবং কোষের আকৃতি প্রদান
করা এর প্রধান কাজ।
২. প্রোটোপ্লাজম – এটা কোষের অর্ধতরল জেলির
মত আঠাল দানাদার সজীব পদার্থ। এটিকে কোষ পর্দা ঘিরে রাখে এবং এর মধ্যে কোষের যাবতীয়
অংশ থাকে। তবে প্রোটোপ্লাজমের দুটি প্রধান অংশ হল নিউক্লিয়াস ও সাইটপ্লাজম।
কলা বা Tissus – অনেকগুলি কোষ একত্রে মিলে এক একটি কলা বা টিসু সৃষ্টি করে।
মানুষের শরীরে সাধানত চার ধরনের কলা দেখা
যায়। তারা হল নিম্নরূপ
১. আবরণী কলা বা এপিথেলিয়াম টিসু –
২. যৌগিক কলা বা কালেক্টিভ টিসু –
৩. পেশী কলা বা মাশেলস টিসু –
৪. স্নায়ু কলা বা নার্ভ টিসু –
অঙ্গ বা Organ - কোন নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের জন্য একত্রিত একাধিক কলার সমন্বয়। যেমন –
হার্ট, লাংস, চোখ, নাক, ত্বক ইত্যাদি।
তন্ত্র বা System – কতোগুলি অঙ্গের বা অর্গানের
সমন্বয়ে একটি তন্ত্র গঠিত হয়। যেমন – কঙ্কাল তন্ত্র, পুষ্টি তন্ত্র, স্নায়ু
তন্ত্র ইত্যাদি।