জীবন ও যৌন চাহিদা
যৌন চাহিদা বা ইচ্ছা আমাদের জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। এটা খাদ্যের মতো জীবনের একটি প্রাথমিক চাহিদা। যার অভাবে মানুষ কতোটা বিকৃত হতে পারে তা আমরা প্রায় প্রতিদিন খবরের কাগজে নাতো টিভির পর্দায় দেখতে পায়। এটা একটা এমন চাহিদা বা আখাঙ্কা যা পূর্ণ না হলে মানুষ পশু পর্যায়ে নেমে যেতে পারে। ন্যায় অন্যায় সমস্ত কিছু সেখানে বিলুপ্ত প্রায়। সাধারণ অসাধারণ জ্ঞানী গুণী সকল ব্যক্তি কামের কাছে পরাধীন। প্রাকৃতির প্রিতিটি প্রাণীর মধ্যে এই চাহিদা সমান রূপে দেখা যায়। যেখানে জীবন সেখানে যৌবন থাকবেই। প্রকৃতি তার সৃষ্টির ধারাকে বজায় রাখার জন্য সকল জীবকূলকে স্ত্রী ও পুরুষ দুই জাতিতে বিভক্ত করেছে। স্ত্রী পুরুষ দুটি যেন বেটারির নেটিভ ও পসিটিভ সেলের মতো একে অন্যকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণে যখন যৌন মিলন হয় তখন জন্ম নেয় একটি নতুন প্রাণীর। এই পরম্পরা সকল প্রাণীকূলের মধ্যে বজায় থাকলেও মানবকূলে তা থেকে বঞ্চিত, এটা বলা যায়। কারন মানুষই পারে তার এই চাহিদা পূর্ণ না হলে কতটা হীন হতে। তাই আমরা প্রকৃতির অভিশাপে অভিশপ্ত। শারীরিক মানসিক রোগ যন্ত্রনায় আজ আমরা বিপন্ন।
কাম বা যৌন চাহিদা আসলে কি - কাম হল মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর একটি সহজাত বৈশিষ্ঠ। কামকে বাদ দিলে তা কখনই জীবন হতে পারেনা। কাম প্রাণী দেহে কর্মের প্রেরণা জাগায়। তাকে উদ্দেশ্য প্রনোদিত করে। এটা একটা বিশেষ শক্তি যা আমাদেরকে কর্মে তৎপর করে রাখে। কর্মে উদ্দমী করে তুলে। মানুষকে কর্ম দক্ষ করতে সাহায্য করে। এটি দেহে এক অদ্ভুত শক্তি সঞ্চার করে।
প্রতিটি সাফল্যবান ব্যক্তির পেছনে এই শক্তির অবদান থাকে। তারা শুধু এই শক্তির অপপ্রয়োগ
না করে প্রয়োগ করতে শিখেছেন। তাই তাদের ইচ্ছা পূর্ণ হয়েছে। জোয়ারের জলকে নিয়ন্ত্রণ
করার মতোই কামকেও নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কামের জোয়ার উঠবেই প্রশ্ন হল আপনি তাকে
নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন কিনা ? যারা পেরেছেন তাদের আমরা বীর্যবানপরুষ বলি আর যারা
অক্ষম তারা এই কামের দাসত্বে সারা জীবন দগ্ধপ্রায়। কিন্তু মানুষ জন্ম থেকেই এই
শক্তি পায় না, এর একটা সীমা আছে। শৈশব, বৃদ্ধের মাঝখানে এর অবস্থান। একে যৌবনকাল
বলা হয়। মানব জীবনে এর গুরুত্ব অসীম। এটাই মানুষের কর্ম কাল। এটি মানব জীবনের
দিবাকাল। সন্ধ্যা নেমে আসার আগেই আপনাকে সমস্ত কর্ম সাধন করে ফলতে হবে। সময় খুবই
অল্প। তাই প্রতিটি সমাজে এই কাম বা যৌবনের চাহিদার অপপ্রয়োগ দূর করার জন্য বহু
চর্চা আলোচনা করা হয়েছে। এর সম্বন্ধে শিক্ষা জ্ঞান অর্জন করা একান্ত দরকার। কিন্তু
কিসের এক লজ্জা সেই দ্বারকে রুদ্ধ করে রেখছে। বই ছাড়া কোথাও এর সম্বন্ধে প্রেক্টিক্যাল
জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয়। অথচ এ নিয়ে অপরাধ সব থেকে বেশি। মানুষ যতোটা না চুরি
ডাকাতি করে তার থেকে বেশি যৌন অপরাধ করে। একে আটকানোর আইন কানুনের সংখ্যার কোন
ঘটতি নেই তবু এই অপরাধ যেমন বন্ধ হয়নি তেমনি তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রোগ
যন্ত্রণাও। কোন আইন যে এই রোগ–অপরাধকে বন্ধ করতে পারবে না তা আজ পরিষ্কার। তবে
উপায় কি ? সেই সরল সত্য – জোয়ার উঠবেই প্রশ্ন হল তাকে কি আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে
শিখেছেন ? তাই নিজেকে ও সমাজকে বাঁচাতে এই লজ্জার দ্বার উন্মুক্ত করতে হবে। এই
বিষয়ে নিজেকেও যেমন জ্ঞানী করতে হবে তেমনই যৌবনের নদীতে নামার আগে কিশোরদেরও এই
জ্ঞানের দীক্ষায় দীক্ষিত করতে হবে।
কাম শাস্ত্র বা যৌন বিজ্ঞান – মানব শরীরে কামের স্থান কোথায়, তার রূপ,
প্রণালী, কৌশল, নিয়ম অনিয়ম এই সব নিয়ে যে গ্রন্থ আলোচনা করে তাকে কাম শাস্ত্র বা
যৌন বিজ্ঞান বলা হয়। প্রাচীন কাল থেকে বহু দেশে বহু জ্ঞানী পণ্ডিতগণ এনিয়ে বহু
গ্রন্থ রচনা করেছেন কিন্তু তাদের মধ্যে বাৎস্যায়নের কাম সূত্র গ্রন্থটি আজও ভারত
তথা পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ঠ যৌন গ্রন্থ গুলির মধ্যে অত্যন্ত সমাদৃত হয়ে আসছে। আধুনিক
যৌন বিজ্ঞানীরা অক্লান্ত পরিশ্রম ও গবেষণা করে নতুন নতুন তথ্য উদ্ঘাটন করেছেন এবং
করে চলেছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল সেই সব তথ্য গুলি বাৎস্যায়নের রচিত কামসূত্র
গুলির উপরে যেতে পারেনি। আজ যা আবিস্কার হছে তা বহুদিন পূর্বেই মহর্ষি ঋষি বাৎস্যায়ন
আবিষ্কার করে ফলেছিলেন।