Nutrition বা পুষ্টি
স্বাস্থ্য বিধি অনুসারে একজন ব্যক্তিকে সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে হলে তাকে নয়টি বিষয়ের উপর নজর দিতে হবে –
(১) খাদ্য (২) জল (৩) বিশ্রাম (৪) সুনিদ্রা (৫) আলো (৬) বাতাস (৭) পোশাক
– পরিচ্ছদ (৮) স্নান ও (৯) সংযম ।
এদের মধ্যে খাদ্য ও জল হল অন্যতম।আমরা কেন খাদ্য গ্রহণ করি ? কারণ আমাদের শরীর বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত
নানা ধরনের জৈবিক ক্রিয়া করে চলেছে। এই সমস্ত জৈবিক ক্রিয়াগুলি সঠিক ভাবে সম্পন্ন
করার জন্য শক্তির প্রয়োজন। জীবদেহে এই শক্তির উৎস হল খাদ্য। আসলে খাদ্যের মধ্যে
স্থৈতিক শক্তি বা স্ট্যাটিক এনার্জি জমা থাকে, যার উৎস হল সূর্য। আমরা যখন এই
খাদ্য গ্রহণ করি তখন খাদ্যের এই স্থৈতিক বা স্থির শক্তি বিশেষ প্রক্রিয়ায় তাপশক্তি
বা গতি শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে জীবদেহের জৈবিক ক্রিয়াগুলিকে সম্পন্ন করতে সাহায্য
করে। আমাদের গ্রহণ করা খাদ্যগুলি বিভিন্ন উৎসেচকের সাহায্যে প্রথমে সরল খাদ্যে
পরিণত হয় অর্থাৎ পাচিত হয়। তারপর এই পাচিত সরল খাদ্য ধীরে ধীরে দেহের বিভিন্ন কোষে
শোষিত হয়। এরপর শোষিত খাদ্য ক্রমশ প্রোটোপ্লাজমের অংশ বিশেষে পরিণত হয় অর্থাৎ
খাদ্যের আত্তীকরণ (assimilation) হয়। প্রোটোপ্লাজমের অংশিভূত হওয়ার পর খাদ্যের
বিপাক ক্রিয়া শুরু হয় বা সোজা কথাই প্রোটোপ্লাজমে মিশে যায় এবং নানারকম রাসায়নিক
বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করে। শেষে পরিপাক ক্রিয়ার পর অপাচ্য খাদ্য বিশেষ উপায়ে দেহ
থেকে বেরিয়া যায়। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে পুষ্টি বা নিউট্রিশন বলা হয়। প্রকৃতির
সমস্ত প্রাণী এই পুষ্টির দ্বারাই জীবন ধারণ করে।
আমাদের জীবনে পুষ্টির গুরুত্ব কি ?
১. বেঁচে থাকার জন্য শক্তি সংগ্রহ করা হল পুষ্টির প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
যার দ্বারা দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ এবং বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয়।
২. পুষ্টির মাধ্যমে খাদ্যের মধ্যে জমে থাকা স্থিত শক্তি জীবনী শক্তিতে
রূপান্তরিত হয়। যার ফলে আমরা চলতে, বলতে ও সমস্ত কাজ করতে পারি।
৩. পুষ্টির মাধ্যমে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে।
৪. পুষ্টির মাধ্যমে দেহে ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য সঞ্চয় করে রাখে, যাতে
ভবিষ্যতে যখন খাদ্যের অভাব হয় তখন সেই সঞ্চিত খাদ্য থেকে শক্তি সংগ্রহ করতে পারে। ফলে আমরা বহু
দিন না খেয়েও বেঁচে থাকতে পারি।
৫. দেহের তাপ উৎপাদন এবং সংরক্ষণেও পুষ্টির বিশেষ ভুমিকা থাকে।
আমাদের কেমন খাদ্য খাওয়া উচিৎ ? যা শরীর গ্রহণ করতে পারে বা সহজেই হজম হয়
অথচ পুষ্টিকর সেটাই খাওয়া উচিৎ। শিশুকাল থেকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত আমাদের খাওয়ারের
প্রয়োজন বাড়ে। আবার ৪০ বছর বয়সের পর থেকে ঠিক উল্টা ভাবে এই প্রয়োজন কমতে শুরু
করে। তবে খাদ্য খেলেই যে সেটা শরীরে পুষ্টিতে পরিণত হবে এমন না, খাদ্যটি যথাযথ হজম হওয়া চাই। যারা পরিশ্রম করে না বা অলস ভাবে জীবন যাপন করে তাদের দেহে খাদ্য সহজে হজম হয় না। কারণ খাদ্য হজমের কাজ দেহের পরিশ্রমের উপর অনেকটা নির্ভর করে। খাওয়ার সাথে বা ঠিক পরেই বেশি পরিমাণ জল পান করা উচিত নয়। এতে হজমের সমস্যা ঘটে। খাওয়ার পরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া ভালো। তবে রাত্রে খাওয়ার পরে একটু পায়চারি করলে অনেক উপকার হয়। রাতে সব সময় হালকা ও কম খাওয়া উচিত। এতে ঘুম ভালো হয়। আর বৃদ্ধ বয়স্কের সবসময় হালকা, সহজ পাচ্য ও কম পরিমাণে খাওয়া প্রয়োজন।
আমাদের গ্রহণীয় খাদ্যকে ছয় ভাগে
ভাগ করা হয়। যেমন –
(১) প্রোটিন জাতীয় খাদ্য
(২) চর্বি জাতীয় খাদ্য
(৩) শর্করা জাতীয় খাদ্য
(৪) লবণ জাতীয় খাদ্য
(৫) জল জাতীয় খাদ্য
(৬) ভিটামিন জাতীয় খাদ্য